এম আর আমিন ,চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্ববৃহৎ রেলপথ নেটওয়ার্ক নিয়ে সেই বৃটিশ আমল থেকেই পূর্বাঞ্চল গঠিত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই সেবা প্রতিষ্ঠানকে ভুমি মালিকানার হিসেবে বলা হয় অঘোষিত জমিদার।পূর্বাঞ্চলের জমির পরিমান প্রায় ২৪ হাজার ৪৪১ একর। যার সিংহভাগই এখন রেল বহিঃর্ভুত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার পরিমাণ ১৪ হাজার একরেরও বেশি। এছাড়া পুরো অবৈধ দখলে রয়েছে ৬১৯.৬৭ একর। তবে লিজ আর অবৈধ দখল দুটো কাজেই টাকা হাতাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভৃ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার পরেও রেলওয়ে ক্রমান্বয়ে লোকসানে জর্জরিত কারণ আভ্যন্তরিন সমন্বয় ও সততার চরম ঘাটতি। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ লুটপাটে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তাদের নিয়ন্ত্রণের অভিনব কৌশলগুলোও পুরো রেলওয়েকে জিম্মি করে নিতে সিদ্ধহস্থ। এই শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি পরিচালিত হয়।বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী নামধারী ভূমিদস্যুর নিয়ন্ত্রণে ভুমি ও বানিজ্যিক ইজারা কার্যক্রম। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জায়গা ও সর্বোচ্চ রাজস্বের জোগান দেওয়া প্রতিটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এই সিন্ডিকেটকে পর্দার আড়ালে থেকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে মাফিয়া-টাইপ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা অসাধু কর্মকর্তারা।তালিকায় পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভুমি কর্মকর্তা,বিভাগীয় ভুমি কর্মকর্তা ও আইন কর্মকর্তার ও বড়বাবু কানুগোর যোগসাজশে জায়গা লিজ, লাইসেন্স নবায়ন,বিভিন্ন জালিয়াতি ও কারসাজি করে প্রতিনিয়ত মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগি জনসাধারণের।এদের কারনে
বছরের হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছে।তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের বিশাল গাড়ি পার্কিং,স্টেশন সংলগ্ন বিশাল জায়গায় গড়ে তোলা মার্কেট,হালিশহর রেলওয়ে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট সংলগ্ন বিশাল জায়গা,এস আর ভি ষ্টেশন,ষোল শহর ষ্টেশন,কালুরঘাট সেতু,কালুরঘাটের মুড়িংঘাট,পটিয়ার,ধলঘাট,দোহাজারী,ষোলশহর,জানাআলীস্টেশন,সীতাকুণ্ড,ভাটিয়ারীসহ গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জায়গা সমূহ উল্লেখযোগ্য।উপরোল্লিখিত জমি এবং বানিজ্যিক ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ইজারাদার বার বার ইজারার মেয়াদ বাড়ানোর পরে আদালতে মামলা দায়ের করে টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং নিয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিত করাসহ,হালিশহর,কালুরঘাট সেতু এবং কালুরঘাট মুড়িংঘাটের টেন্ডারের বৈধতা আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান রয়েছে পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদ্য সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, যারা টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাঁরাই দেখিয়ে দেন আদালতের স্থগিত আদেশ নিয়ে আসার যাবতীয় বিষয়ে।কর্মকর্তা আর ইজারাদার আলাদা ব্যক্তি হলেও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা পায়।সৃত্রে জানা যায়,পুর্বাঞ্চল অবৈধ দখলদারের পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে লিজের নামে একের পর এক ভূমি চলে যাচ্ছে দখলদারের হাতে।সম্প্রতি পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের একটি বাণিজ্যিক প্লটের লাইসেন্স নবায়নে ভয়াবহ জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে বিভাগীয় রেলওয়ে ভুসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবল করিম।সূত্র জানায়, পাহাড়তলী বাজারের ডি/১৭০ নম্বর বাণিজ্যিক প্লটের প্রকৃত ইজারাদার মো. আবুল বশর। ১৯৯২ সালে তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করেন। ২০০ বর্গফুট দোকানের নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করে আসছেন তিনি। শারীরিক অক্ষমতার কারণে সম্প্রতি দোকানটি হস্তান্তর করেন সুমন চন্দ্র নাথ নামে এক ব্যক্তির কাছে। নিয়ম মেনে নামজারি করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও করা হয়। তবে অদৃশ্য কারণে ইজারাদারের আবেদন আমলে না নিয়ে নামজারি করা হয় উপ-ভাড়াটিয়া মো. নজরুল ইসলামের নামে। বর্তমানে সেই উপ-ভাড়াটিয়া দোকানের মালিক দাবি করছেন।অভিযোগ রয়েছে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবল করিম বদলি হওয়ার আগে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তির অজান্তে একটি দোকানের নামজারি করে দেন এক উপ-ভাড়াটিয়ার নামে। এর সঙ্গে জড়িত রেলওয়ের এক শ্রমিক লীগ নেতা। ঘটনা ধামাচাপা দিতে একাধিকবার শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো। গত ৬ মাস ধরে যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রকৃত ইজারাদারকে।জানতে চাইলে প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, রেলওয়ের অসংখ্য জমি বেদখলে রয়েছে। যা আমি আসার পর থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এরমধ্যে অনেকগুলো জমি উদ্ধার করে নতুন করে লিজ দেওয়া হয়েছে।লিজের সমপরিমাণ টাকা অগোচরে ভুসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে ঢুকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ মোটেও সত্য নয়।
তবে পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তার যথেষ্ট দুর্বলাতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চলে রেলের ভৃ-সম্পত্তি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে
Posted by