পলিথিন মোড়ানো প্রার্থীদের পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে নগর

Posted by

 

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে আগামি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। এ নিয়ে প্রচারণায় রয়েছেন প্রার্থীরা। টাঙিয়েছেন ব্যানার-পোস্টার। কিন্তু প্রচারণার পোস্টার লেমিনেটেড করে লাগানো হয়েছে পলিথিন। যা পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদি সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।এই সংসদীয় আসনগুলো ছাড়াও অন্যান্য আসনের বেশিরভাগ প্রার্থী পোস্টারে ব্যবহার করেছেন লেমিনেটিং। অথচ পলিথিন মাটি, পানি, বায়ুকে সমানভাবে দূষিত করে। যা পরিবেশের জন্য ডেকে আনবে মারাত্নক বিপর্যয়।চট্টগ্রামে ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জন সমর্থনের পাশাপাশি আছে দলীয় পদ-পদবিও। কোনও কোনও আসনে দলীয় প্রার্থীর চেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা অনেকাংশে বেশি।১৬টি আসনের মধ্যে আটটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে এবং দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গেও নিজ দলের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে। এ আসনে মোট সাত প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা এবং মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন।চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মোট আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এ আসনে শক্তিশালী আরও তিন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পাটির (বিএসপি) প্রার্থী শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ।চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্যও। আসনটিতে মোট আট জন প্রার্থী আছেন। শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় আসনটিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মাহফুজুর রহমান।চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এস এম আল মামুন। তিনি সদ্য সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে মোট ছয় প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম আল মামুন সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুস সালামকে দলীয় প্রার্থী করা হয়। পরে আসনটি আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ছেড়ে দেওয়া হয়।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। আছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মো. নাজিম উদ্দিন।চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তার পাশাপাশি এ আসনে আরও চার জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে অনেক প্রার্থী এলাকার লোকজনের কাছে অপরিচিত। যে কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ড.হাছান মাহমুদ। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও পাঁচ জন। তাদের অধিকাংশই এলাকার ভোটারদের কাছে অপরিচিত।ড.হাছান মাহমুদ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদকে প্রার্থিতা দিলেও সেটি দলের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সোলায়মান আলম শেঠ।এ আসনে মোট ১০ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া, কোতোয়ালী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও সাত প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক। আসনটিতে মোট ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হিসেবে আছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সাবেক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ। আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেশ জন সমর্থন রয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম আবদুল লতিফ। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি। এ আসনে মোট সাত প্রার্থীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আছেন। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সদ্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে মোট আট প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী। আসনটিতে মোট সাত জন প্রার্থী।চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে মোট আট প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সদ্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী।চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে মোট সাত প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনফুলের মালিক আব্দুল মোতালেব। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে তার সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে মোট ১০ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মুজিবুর রহমান।স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলেন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দলের কোনও নিষেধ নেই,ভোটাররা যাকে ভোট দেবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *