চট্টগ্রাম প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে বন্দর নগরীতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে আরেকটি গৌরবদীপ্ত ইতিহাস।দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গপথ বা টানেল নির্মাণের ইতিহাস আর কোনো দেশের নেই।পতেঙ্গা প্রান্তে দেখা গেছে, টানেল ও আউটার রিং রোডের সংযোগস্থল গোলচত্বর লাল-সবুজের পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে।চট্টগ্রাম সিটি করপোশেনের (চসিক) উদ্যোগে পুরো নগরীকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন আমেজে। পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সংস্কারের পাশাপাশি রঙ করা হচ্ছে সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার-ব্যানারে চেয়ে গেছে নগরী ও আনোয়ারা প্রান্তের রাস্তাঘাট। পতেঙ্গা প্রান্তে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ম্যুরাল। সঙ্গে আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান। জনসভার স্থলে নৌকার আদলে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করা হবে শনিবার (২৮ অক্টোবর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করবেন।সকাল ১০টায় নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নামফলক উন্মোচন করবেন তিনি। এরপর টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে কাফকো কলোনি সংলগ্ন কেইপিজেড মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। জনসভা দুপুর ২টায় হওয়ার কথা ছিল। এখন সকাল ১০টায় জনসভা শুরু হবে। একইসঙ্গে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।উদ্বোধন ও জনসভা ঘিরে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে নগরীতে যানবাহন চলাচল ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সকাল থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেবে না পুলিশ। সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রানী প্রামাণিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, ‘টানেল উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে ভিভিআইপি-ভিআইপিরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, টানেল ও সি-বিচ এলাকা দিয়ে সড়কপথে চলাচল করবেন। তাদের নিরাপত্তা ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে টানেল উদ্বোধনের স্থান পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে কাউকে ঢুকতে দেবে না পুলিশ। এজন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।টানেলের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই)’ স্থাপনা বিবেচনায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেলের সুরক্ষায় কাজ করবে নৌবাহিনী ও পুলিশ। একই সঙ্গে টানেলে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ট্র্যাফিক পুলিশ। দুই পাশে দুটি ফাঁড়ি ও দুটি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলের প্রবেশমুখে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে চারটি অত্যাধুনিক স্ক্যানার। উদ্বোধনের আগেই দুই প্রান্তে দুটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া, বাকি দুটি উদ্বোধনের পর দ্রুত স্থাপনের কাজ শুরু হবে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ক্যানার দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলোতে চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।এ ছাড়া, টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী বাস, কার, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে যানবাহনের নিচের অংশে বিস্ফোরক জাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।এ ছাড়া, টানেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে সেটি দ্রুত অপারেশনাল টিম গিয়ে সমাধান করবে। টানেলের কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ড্রেনেজ সিস্টেম, পাওয়ার সিস্টেম— এগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে।টানেলে স্থাপন করা হয়েছে ১১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা অত্যাধুনিক ও অটোমেটিক এসব ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে সবকিছু। টানেলের আনোয়ারা অংশে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং স্টেশন। যেখান থেকে সবকিছুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া, টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) সার্বক্ষণিক বিশেষ টিম তৈরি থাকবে। তারা যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত মুভ করবে।টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘টানেল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন বড় ধরনের কোনও কাজ নেই।দুটি টিউবই প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
স্বপ্নের টানেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
Posted by